নেপোলিয়নকে বিপ্লবের সন্তান বলা হয় কেন? - equiz4u

নেপোলিয়নের চারিত্রিক দৃঢ়তা, শাসন করার ক্ষমতা এবং অসম সাহস ইত্যাদির কারনে ঐতিহাসিক ফিশার তাকে 'বিপ্লবের সন্তান' বলে গণ্য করেছেন। নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ছিলেন আধুনিক বিশ্বের ইতিহাসে এক অতি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রনায়ক। তিনি একজন অতি সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে প্রথমে ফ্রান্সের 'কনসাল' পদে নিযুক্ত হন এবং পড়ে ১৮০৪ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের সম্রাট হিসাবে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ফরাসি বিপ্লবের ফলে ফ্রান্সে যে সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার আদর্শের উন্মেষ ঘটেছিল, নেপোলিয়ন সেগুলির মধ্যে স্বাধীনতা ছাড়া অপর দুটি আদর্শ ( সাম্য, মৈত্রী )-কে বাস্তবায়িত করতে সর্বদা সচেষ্ট হয়েছিলেন।

বিপ্লবী আদর্শ ঃ ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ৪ আগস্ট ফ্রান্সের সংবিধান সভার দ্বারা সামন্ত প্রথা, ভূমিদাস প্রথা, সামন্তকর, করভি বা বেগারশ্রম, টাইদ বা ধর্মকর ইত্যাদির বিলোপ ঘটানো হয়। নেপোলিয়ন বিপ্লবকে সম্মান জানাতে এইসব বিপ্লবী নিয়মগুলির কোনোরকম পরিবর্তন করেননি। এছাড়াও নেপোলিয়নের বিভিন্ন বিপ্লবী সংস্কার প্রবর্তন, জনকল্যাণকর কাজ, বিরোধী দলগুলোর প্রতি উদারতা প্রভৃতি দেশের জনগণকে তার প্রতি বিশেষভাবে আকৃষ্ট করেছিল। ফলে তিনি 'বিপ্লবের প্রতীক' হিসাবে পরিণত হন। 

বিপ্লবী আদর্শের প্রসার ঃ ফ্রান্সের পাশাপাশি জার্মানি, ইতালি প্রভৃতি দেশগুলিতেও নেপোলিয়নের তার গ্রাদ আর্মির সাহায্যে অভিযান চালিয়েছিলেন। এরফলে সেসব দেশ থেকে পুরাতনতন্ত্র ধ্বংসসাধন হয়। নেপোলিয়ন সামন্ত প্রথার বিলোপ সাধন করে আইনের মাধ্যমে সাম্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এইভাবে তিনি নিজের দেশের পাশাপাশি অন্যান্য দেশেও বিপ্লবের প্রসার ঘটান। এজন্যই বিদেশীদের কাছে তিনি  'বিপ্লবের অগ্নিময় তরবারি'-র মতো ছিলেন। 

কোড নেপোলিয়ন প্রবর্তন ঃ ফরাসি বিপ্লবের আগে ফ্রান্সে যেরকম বৈষম্যমূলক শ্রেণীবিভক্ত সমাজ ব্যবস্থার প্রচলন ছিল নেপোলিয়ন 'কোড নেপোলিয়ন'-এর মাধ্যমে ১৮০৪ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রচলিত আইন গুলির মধ্যে যে পার্থক্য ছিল তা দূরীভূত করেন এবং পরস্পরবিরোধী আইনগুলির মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করে দেশের সর্বত্র সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে 'সমতার নীতি' প্রয়োগ করেন। ফলে সাধারণ মানুষের কাছে তা বেশি করে গ্রহণীয় হয়ে ওঠে।

বিপ্লব-এর স্থায়িত্ব প্রদান ঃ ফ্রান্সকে বিভিন্ন বিরোধী শক্তির হাত থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে নেপোলিয়ন একাধিকবার প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন। যার ফলে ফ্রান্স এবং বিপ্লব উভয়ই বিভিন্ন সময়ে রক্ষা পেয়েছে। 

          সবশেষে বলা যায় যে, নেপোলিয়ন একদিকে যেমন নিজের দেশের সাধারণ মানুষের জন্য বিভিন্ন জনকল্যাণকামী কার্যাবলী সম্পাদন করেছিলেন, তেমনই অন্যান্য দেশেও তিনি বৈপ্লবিক সংস্কার করেছিলেন। এককথায় নেপোলিয়ন এবং বিপ্লব পরস্পরের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে ছিল। তাই সবদিক বিচার করে নেপোলিয়নকে নিঃসন্দেহে 'বিপ্লবের সন্তান' বলা যায়।

আরও পড়ুন ঃ

(১) ধর্মসংস্কার আন্দোলনে মার্টিন লুথারের অবদান আলোচনা করো।

(২) ফ্রান্সে ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো। 

(৩) মেটারনিখ ব্যবস্থা ও তার বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো। 

(৪) ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দকে বিপ্লবের বছর বলা হয় কেন। 

(৫) ১৮৩০ সালের জুলাই বিপ্লবের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো। 

(৬) বাস্তিল দুর্গের পতন কীভাবে ঘটেছিল? 

(৭) নেপোলিয়নকে বিপ্লবের ধ্বংসকারী বলা হয় কেন? 

equiz4u

Post a Comment

0 Comments