ধর্মসংস্কার আন্দোলনে মার্টিন লুথারের অবদান আলোচনা করো - equiz4u

 ভুমিকা ঃ জার্মানির ধর্মীয় আন্দোলনের নেতা মার্টিন লুথার ছিলেন এমন বিরল একজন মানুষ, যিনি ইতিহাসের বইয়ে চলা গতিপথকে নিজের ইচ্ছা অনুসারে পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন ইউরোপের ধর্মসংস্কার আন্দোলনের প্রাণপুরুষ, বিপ্লবী ও পথ-প্রদর্শক। 

প্রথম জীবন ঃ ১৪৮৩ খ্রিস্টাব্দে জার্মানির ইসলি-বেন গ্রামের এক কৃষক পরিবারে মার্টিন লুথারের জন্ম হয়। এরফুট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা লাভের পর তিনি ১৫০৭ খ্রিস্টাব্দে সন্ন্যাসী সংঘে যোগদান করেন এবং পরের বছর তিনি উইটেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মতত্ত্বের অধ্যাপক হিসাবে নিযুক্ত হন। ১৫১০ খ্রিস্টাব্দে তিনি রোম ভ্রমণের সময় পোপ ও যাজকদের দুর্নীতি দেখে হতাশ হন এবং জার্মানিতে ফিরে এসে রোমান চার্চের অন্যায় কাজের সমালোচনা শুরু করেন। 

লুথারের ৯৫ থিসিস ঃ মার্টিন লুথার মনে করতেন, মানুষের সকল পরিণতি তার কর্ম দ্বারা পূর্ব নির্ধারিত, কেউ এর পরিবর্তন করতে পারবে না। রোমের সেন্ট পিটার গির্জার সংস্কারের কাজ শুরু হলে এর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ আদায় করতে পোপ দশম লিও-এর প্রতিনিধি টেট জেল ১৫১৭ খ্রিস্টাব্দে জার্মানিতে এসে মার্জনাপত্র বিক্রি করতে শুরু করলে মার্টিন লুথার এই অন্যায় কাজের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। পোপের অন্যায় কাজকর্মের বিরুদ্ধে লুথার ১৫১৭ খ্রিস্টাব্দে ৯৫ টি প্রশ্ন রচনা করে তা 'উইটেনবার্গ' বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজায় ঝুলিয়ে দেন এবং পোপের উত্তরের দাবি করতে থাকেন। লুথারের উত্থাপিত এই ৯৫ টি প্রশ্ন '৯৫ থিসিস' নামে পরিচিত। লুথারের এই প্রশ্নগুলি সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। 

লুথারের জনসমর্থন ঃ লুথারের ৯৫ টি প্রশ্নের প্রত্যুত্তরে টেট জেল ১০৬ টি পাল্টা প্রশ্ন ছাপিয়ে প্রচার শুরু করে, কিন্তু জার্মানির ছাত্ররা তা আগুনে পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানায়। এই সময় তিনি আরও অনেকগুলি পুস্তিকার মাধ্যমে যাজক বিরোধী কাজকর্মের প্রচার চালাতে শুরু করেন এবং তিনি প্রচার করেন পোপ, যাজক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। গির্জা তার নিজের স্বার্থে এই পার্থক্য বজায় রেখে চলেছে। ধর্মের নামে জার্মানির অর্থ রোমে চলে যাওয়ার বিষয়ে তিনি তীব্র প্রতিবাদ জানান। 

গৃহযুদ্ধ ও বিদ্রোহ ঃ প্রচলিত ধর্মীয় ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লুথারের প্রতিবাদের দলে ক্রুদ্ধ পোপ দশম চার্লস তাকে ধর্মচ্যুত বলে ঘোষণা করেন এবং পোপের নির্দেশে লুথারকে ধর্ম বিরোধী বক্তব্য প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। কিন্তু লুথার তাতে অসম্মত হলে পোপ তাকে ধর্মবহির্ভূত বলে ঘোষণা করে জার্মানির সম্রাটকে শাস্তিদানের নির্দেশ দেন। পোপের নির্দেশে রাজা লুথারের প্রাণদণ্ডের আদেশ দেন। 

            ইতিমধ্যেই, ক্যাথলিক ধর্ম ছেড়ে বহু জার্মান সাধারণ মানুষ লুথারের অনুগামীতে পরিণত হয়, ফলে লুথার ও পোপের সমর্থনের প্রশ্নে জার্মানিতে গৃহযুদ্ধের সূচনা হয়। কৃষকেরা লুথারের সমর্থনে বিদ্রোহ শুরু করলে পরিস্থিতি জার্মান সম্রাটের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এই সময় লুথার জার্মান ভাষায় বাইবেল অনুবাদ করলে পোপতন্ত্রের অনাচার সম্পর্কে মানুষ আরও সজাগ হয়, ফলে গৃহযুদ্ধ তীব্র আকার ধারণ করে। এই গৃহযুদ্ধ চলাকালীন মার্টিন লুথারের মৃত্যু ঘটে। 

আরও পড়ুন ঃ

(১) ফ্রান্সে ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো। 

(২) মেটারনিখ ব্যবস্থা ও তার বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো। 

equiz4u

Post a Comment

0 Comments