সিন্ধু সভ্যতার মূল বৈশিষ্ট্য গুলি কি কি ꘡What were the main features of Indus Valley civilization ꘡ E-quiz4u


👉 হরপ্পা সভ্যতা বা সিন্ধু সভ্যতার মূল বৈশিষ্ট্য - 

১৯২১-১৯২২ খ্রিস্টাব্দে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, দয়ারাম সাহানি, স্যার জন মার্শাল প্রমুখ পুরাতাত্ত্বিকদের প্রচেষ্টায় হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো-কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বিশাল সিন্ধু সভ্যতার আবিষ্কার ঘটে। প্রাচীনত্বের দিক থেকে বিচার করলে এই সভ্যতা প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ বছরের পুরনো। এই সভ্যতা প্রায় ১২.৫ লক্ষ বর্গকিমি জায়গা জুড়ে বর্তমান পাকিস্তান ও ভারতের কিছু অঞ্চলের মধ্যে  বিকাশ লাভ করেছিল। নীচে এই সভ্যতার প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করা হল -


          উন্নত নগর পরিকল্পনা ঃ সিন্ধু সভ্যতা বা হরপ্পা সভ্যতা ছিল একটি নগরকেন্দ্রিক সভ্যতা। এই সভ্যতার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কেন্দ্র যেমন- হরপ্পা, মহেঞ্জোদারো, লোথাল, কালিবঙ্গান প্রভৃতি অঞ্চলে উন্নত নগর পরিকল্পনা দেখা দেয়। নগরগুলির নির্মাণ প্রণালী ছিল আধুনিক যুগের মতো। প্রতিটি নগর ছিল দুর্গ দ্বারা বেষ্টিত। নগরের উচু অংশে তৈরি দুর্গে শাসক শ্রেণীর মানুষেরা বসবাস করত এবং দুর্গের নিচে নগরের মধ্যে বসবাস করত সাধারন জনগণ। 


          রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি ঃ  সোজা ও চওড়া রাজপথ ছিল সিন্ধু সভ্যতার উল্লেখযোগ্য একটি বৈশিষ্ট্য। প্রতিটি বড় রাস্তার সঙ্গে গলিপথগুলি সমকোণে যুক্ত থাকত। রাজপথ গুলি ৯ থেকে ৩৪ ফুট পর্যন্ত চওড়া হত। ঘরগুলি প্রতিটি রাস্তার পাশে সারিবদ্ধ ভাবে নির্মিত হত। একতলা, দোতলা ও তিনতলা বিশিষ্ট ঘর ছিল এই সভ্যতার একটি আসল পরিচয়। ঘরগুলি পোড়া ও শুকনো ইটের তৈরি হত। প্রতিটি বাড়ি ছিল প্রাচীর দিয়ে ঘেরা এবং প্রতিটি বাড়িতেই থাকার ঘর, কুয়ো, স্নানাগার, রান্নাঘর ও উঠোন প্রভৃতি থাকতো। 


          পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা ঃ সিন্ধু সভ্যতার শহরগুলিতে উন্নত পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা লক্ষ্য করা যায়। শহরের প্রতিটি বাড়ি থেকে জমা জল, নোংরা জল বাইরে বের করে দেওয়ার জন্য ছোট ছোট নালীর ব্যবস্থা থাকত যা দিয়ে নোংরা জল রাজপথের দু'ধারে তৈরি বড়ো প্রণালীতে এসে পড়ত এবং সেখান থেকে নোংরা জল শহরের বাইরে চলে যেত। ঐতিহাসিক বাশামের মতে, "রোমান সভ্যতার আগে পৃথিবীর অন্য কোন সভ্যতায় এত সুন্দর পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা ছিল না"। 


          শস্যাগার ও স্নানাগার ঃ সিন্ধু সভ্যতার নগর গুলিতে সাধারণ জনগণের ব্যবহারের জন্য কিছু বিশেষ স্থাপত্য গড়ে উঠতে দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, হরপ্পায় আবিষ্কৃত শস্যাগারটির কথা। যার আয়তন ছিল ২০০ × ১৫০ বর্গফুট। এই শস্যাগারের পাশেই ছিল শস্য মাড়াই করার স্থান এবং শ্রমিকদের বসবাসের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা। এছাড়া মহেঞ্জোদারোতে আবিষ্কৃত স্নানাগারের আয়তন ছিল ১৮০ × ১০৮ ফুট। স্নানাগারটি ইটের তৈরি ছিল এবং এর নোংরা জল বাইরে বের করে দেওয়ার জন্য  সুব্যবস্থা ছিল। 


          খাদ্য ও পোশাক-পরিচ্ছদ ঃ  সিন্ধু সভ্যতার অধিবাসীরা খাদ্যদ্রব্য হিসাবে খেজুর, বাদাম, গম, যব ইত্যাদির পাশাপাশি শূকরের মাংস এবং বিভিন্ন ধরনের পাখির মাংস তারা গ্রহণ করত। সিন্ধু সভ্যতায় আবিষ্কৃত মূর্তি থেকে পোশাক পরিচ্ছদের এক সম্যক ধারণা লাভ  করা যায়। সিন্ধু সভ্যতার মানুষেরা সুতিবস্ত্রের সাথে সাথে সোনা, রূপো প্রভৃতির অলংকার ব্যবহার করত। 


          ধর্মীয় জীবন ঃ সিন্ধু সভ্যতার মানুষেরা পশুপতি শিবের পূজা ছাড়াও মাতৃদেবতা এবং প্রকৃতির পূজা করতো। সিন্ধু সভ্যতার মানুষেরা নদী, গাছ, পাথর প্রভৃতির পূজাও করতো। সিন্ধু সভ্যতার মানুষেরা পরলোকে বিশ্বাস করত। তারা মৃতদেহ সমাধিস্থ করত এবং অনেক সময় মৃতদেহের পাশে মৃতের ব্যবহার করা জিনিসপত্র রাখা হতো।


          সামাজিক শ্রেণীবৈষম্য ঃ  সিন্ধু সভ্যতার সমাজজীবনে শ্রেণীবৈষম্য বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয়। বড় প্রাসাদ ও ছোট বাড়ি থেকে ধনী-দরিদ্রের শ্রেণীবৈষম্যের ধারণা পাওয়া যায়। সমাজে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মানুষের বসবাসের পাশাপাশি হরপ্পা সভ্যতার বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে জীবনযাত্রার কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। ফলস্বরূপ সিন্ধুবাসিরা রক্ষণশীল জীবনের পরিচয় বহন করেছে। 


         উপসংহার ঃ পরিশেষে বলা যায় যে, সিন্ধু সভ্যতা ছিল প্রাচীনকালের এক অন্যতম বৃহত্তম সভ্যতা। এর আগে এত বড় কোন সভ্যতার বিকাশ পৃথিবীতে দেখা যায়নি। তাছাড়া প্রায় প্রতিটি নগর কোন না কোন নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল তাই এই সভ্যতাকে নদীমাতৃক সভ্যতা হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে।


আরও জানুন ঃ

১. মেহেরগড় সভ্যতার পরিচয় দাও।

২. আর্যদের আদি বাসস্থান সম্পর্কে বিভিন্ন ঐতিহাসিকের মতামত। 

E-quiz4u

equiz4u

Post a Comment

0 Comments