উত্তর ঃ
সত্য প্রতিষ্ঠায় যীশু,
গৌতম বুদ্ধ,
রাস্কিন ও টলস্টয়ের চিন্তাধারার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে গান্ধিজী সত্যাগ্রহ ধারণাটি গড়ে তোলেন। গীতা, উপনিষদ সম্বন্ধে তাঁর গভীর চিন্তাধারা তাঁকে সত্যাগ্রহ আন্দোলনে সমৃদ্ধ করেছিল।
মূল বিষয় / অর্থ ⇨ সত্যাগ্রহ কথাটির আক্ষরিক অর্থ হল সত্যের প্রতি আগ্রহ। সত্যাগ্রহ হল সুসংহত জীবন দর্শন, সত্য প্রতিষ্ঠার নৈতিক সংগ্রামে এক নিরস্ত্র প্রতিরোধ। অনেকে গান্ধিজীর সত্যাগ্রহকে ব্রিটিশরাজের বিপক্ষেচালিত রাজনৈতিক সংগ্রামের এক কৌশল বলে আখ্যা দিয়েছেন। গান্ধিজী তাঁর ‘হিন্দ স্বরাজ’ গ্রন্থে বলেছেন –“সত্যাগ্রহ হল ব্যক্তির আত্মপীড়নের মাধ্যমে স্বাধিকার অর্জনের এক প্রচেষ্টা”। গান্ধিজীর কাছে সত্যাগ্রহ ছিল সত্য, অহিংসা ও আত্মত্যাগের যোগফল। সত্যাগ্রহ বলতে বোঝায় সকল অন্যায়, অবিচার, নিপীড়ন ও শোষণের বিরুদ্ধে পবিত্র আত্মশক্তির প্রতিরোধ। তাঁর মতে, সত্যাগ্রহ হল যেকোন ব্যক্তির এক সহজাত, জন্মগত অধিকার। এশুধু পবিত্র অধিকার নয়, পবিত্র কর্তব্য।
প্রকৃতি ⇨ গান্ধিজী তাঁর রচনায় সত্যাগ্রহ বিষয়টি বোঝাতে গিয়ে যেসমস্ত দিকের কথা উল্লেখ করেছেন তা নিন্মে আলোচনা করা হল
–
(ii) সত্যাগ্রহ দুর্বলের জন্য নয় ⇨ গান্ধিজী বলেছেন, সত্যাগ্রহে দুর্বলতা, ভীরুতা ও কাপুরুষতার কোনো জায়গা নেই। যারা ভীরু, কাপুরুষ ও দুর্বল তারা সত্যাগ্রহী হতে পারবে না। সত্যাগ্রহ মানে সত্যকে জয় না করা পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্নভাবে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার সামর্থ; যা দুর্বলচিত্ত মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।
(iii) সর্বশক্তি দিয়ে অন্যায়কে অস্বীকার ⇨ গান্ধিজীর মতে সত্যাগ্রহ নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধ নয়, এহল সর্বশক্তি দিয়ে অন্যায়কে অস্বীকার করার সংগ্রাম। নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধ হল দুর্বল,
ভীরু ও কাপুরুষের অস্ত্র। সত্যাগ্রহ তা নয়। সত্যাগ্রহ হল সদিচ্ছা ও ভালবাসার সাহায্যে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে অন্যায়কে অস্বীকার করার এক বিশেষ পদ্ধতি।
(iv) সত্যাগ্রহের কলাকৌশল ⇨ গান্ধিজী সত্যাগ্রহ পালনের জন্য কয়েকটি কৌশলের কথা বলেছেন। যথা
– (ক) প্রলোভনের ফাঁদে পা না দেওয়া (খ)
বিবেকের বিরুদ্ধে কোনকিছু না করা (গ) সত্যাগ্রহে উচ্ছৃঙ্খলতার কোন জায়গা নেই (ঘ)
বিজয়ীর আধিপত্যের সামনে মাথানত না করা (ঙ)
সত্যাগ্রহের জন্য চরম ত্যাগ স্বীকার করতে
, এমনকি মৃত্যুবরণ করতেও প্রস্তুত থাকা (চ) জনগণের কাছে যে ব্যাপারগুলি মৌলিক গুরুত্বের, সেগুলি কষ্ট স্বীকারের মধ্যে দিয়ে অর্জন করা।
(v) সত্যাগ্রহের চরিত্র ⇨ গান্ধিজী বলেছেন সত্যাগ্রহের চরিত্র হল সত্যাগ্রহের সৌন্দর্য। এটা আপনা-আপনিই আসে,
এর সন্ধান করতে হয় না। নিরন্তর সত্য সন্ধান ও সত্যে উপনীত হওয়ার দৃঢ় সিদ্ধান্তের নামই হল সত্যাগ্রহ।
(vi) আত্মিক শক্তির সংগ্রাম ⇨ গান্ধিজীর মতে,
সত্যাগ্রহ হল আত্মিক শক্তির এক সংগ্রাম। এহল এমন এক ধরনের সংগ্রাম যেখানে প্রচলিত অর্থে জয়-পরাজয় বলে কিছু নেই। সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করাই হল এই সংগ্রামের মূল উদ্দেশ্য।
(vii) সত্যাগ্রহ ও অহিংসা ⇨ গান্ধিজীর রচনায় সত্যাগ্রহের সাথে অহিংসার একটি অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক লক্ষ্য করা যায়। তাঁর মতে সত্যাগ্রহীরা কখনও হিংসাকে প্রশ্রয় দেবে না। সে হবে অহিংসার পূজারী, প্রতিপক্ষকে সে যেমন ঘৃণা করবে না ঠিক তেমনই তাকে অতিরিক্ত শ্রদ্ধাও করবে না। এভাবে অহিংসা দিয়ে হিংসাকে জয় করার জন্য তাকে সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে। তিনি মনে করতেন, অন্যায়ের প্রতিরোধ করার জন্য সত্যাগ্রহী আত্মবিসর্জন দিতেও বিন্দুমাত্র ভয় পাবে না।
সবশেষে বলা যায় যে,
সত্যাগ্রহীর কিছু দাবী আদায় করার লক্ষ্য থাকলেও মূল উদ্দেশ্য হল
প্রতিপক্ষের মনে শুভবোধ জাগ্রত করে তাঁর হৃদয়ের পরিবর্তন ঘটানো।
5th semester DSE political science. equiz4u
আরও জানুন ঃ
১. সর্বোদয় সম্পর্কে গান্ধিজীর চিন্তাধারা ব্যাখ্যা করো।
২. গান্ধিজীর খেদা আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করো।
৩. অছি ব্যবস্থা সম্পর্কে গান্ধিজির ধারণা ব্যাখ্যা করো।
0 Comments