গান্ধীজী পরাধীন ভারতের মানব লাঞ্ছনা সম্পর্কে ব্যথিত ছিলেন। ভারতের জনসমাজ যুগ যুগ ধরে দারিদ্র, শোষণ, বঞ্চনা প্রভৃতি সমস্যার দ্বারা জর্জরিত হয়ে রয়েছে। এছাড়া ভারতীয় নারীরা জন্মগতভাবে অধিকারহীন জীবনযাপন করে চলেছে। তাই গান্ধীজীর জীবনে সবচেয়ে বড় ব্রত ছিল নারী জাতির বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের ব্যাপারে যথাসাধ্য প্রয়াস চালিয়ে যাওয়া। তিনি মনে করেন নারী, এবং পুরুষের মধ্যে সমানাধিকার ও মর্যাদা গণ্য হওয়া উচিত।
অধিকার ও সমমর্যাদা ঃ 'ইয়ং ইন্ডিয়া' এবং 'হরিজন' পত্রিকায় লেখার পাশাপাশি গান্ধীজী বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে দেওয়া বক্তৃতায় নারী ও পুরুষের সমান অধিকার ও তাদের সমান মর্যাদার উল্লেখ করেছেন। গান্ধীজী কন্যা এবং পুত্রকে জন্মগতভবে পুরোপুরি সমান মর্যাদাসম্পন্ন বলে মনে করেছেন। তিনি নারী-পুরুষের ভেদাভেদকে সামাজিক কুসংস্কার বলে গণ্য করেছেন। তাঁর মতে নারীরা সনাতন কাল ধরে পুরুষের তৈরি ধর্মীয় ও সামাজিক নানা কুপ্রথা ও কুসংস্কারের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে আছে। এই অবস্থার অবসান ঘটানো প্রয়োজন। তাই 'ইয়ং ইন্ডিয়া'-তে লিখেছেন মহিলাদের অধিকার সম্পর্কে ও তাদের সমমর্যাদার ব্যাপারে কোনো কিছুর সঙ্গে আপোস করা যাবে না। তিনি মনে করেন যে, পুরুষেরা যেভাবে নারীদের উপর প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে তা অবমাননা ছাড়া আর কিছু নয়, যা পুরুষের মূর্খতা।
স্বাবলম্বীতা ঃ নারীরা পুরুষের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকুক, গান্ধীজী তা চাননি। তিনি চান নারীরা স্বাবলম্বী হয়ে উঠুক। সেই কারণে কুটির শিল্পের প্রচলন ও প্রসারের উপর তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি মনে করতেন, নারীরা 'চরকা কাটা', 'কাটুনীর কাজ' ইত্যাদির মাধ্যমে অর্থ আয় করতে পারবে। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য হল, নারীরা তাদের সংঘবদ্ধতার পরিপ্রেক্ষিতে এক কাটুনি সংঘ গড়ে তুলেছিল। এর সদস্যরা গান্ধীজিকে পিতা হিসেবে দেখতো নাম, বরং তাকে মায়ের মতোই মনে করত। নারীদের জন্য গান্ধীজীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছিল সবরমতী, সেবাগ্রাম প্রভৃতি কেন্দ্রে। স্বাধীনতার পরে সাম্প্রতিককালে ভারত সরকারের ও বেসরকারি উদ্যোগে খাদি, রেশমি ও মিহি কাপড়ের ভান্ডার গড়ে উঠেছে, সেখানে যেখানে নারী পুরুষ সমান ভাবে পরিশ্রম করে চলেছে।
একদিকে এর দ্বারা তারা আয়ের পথ খুঁজে পেয়েছে এবং উপকৃত হয়েছেন মহিলা ও পুরুষ উভয়েই। যদিও একথা বলা যায়, এধরনের সমাজব্যবস্থায় কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলিকে অর্থ সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসতে হবে, অপরদিকে তেমনি অনেক নারী ও কম শিক্ষিত মেয়েরা তাদের শ্রম ও সময় ব্যয় করে উপার্জন করতে সক্ষম হবে।
মূল্যায়ন ঃ সবশেষে বলা যায় যে, গান্ধীজী কংগ্রেস দলের সদস্যদের আহ্বান জানান যে, নারীদের সমান অধিকারের ক্ষেত্রে তাদের সযত্ন প্রয়াস নিতে হবে। তিনি মহিলাদের পুরুষদের সমতুল্য হিসাবেই দেখেছেন।
0 Comments