➤ "কলিঙ্গ দেশে ঝড়-বৃষ্টি" কাব্যাংশের পূর্বসূত্র ঃ
কবিকঙ্কণ মুকুন্দ চক্রবর্তী রচিত চন্ডীমঙ্গলের আখেটিক খন্ডের কাহিনীতে ধর্মকেতু ও নিদয়ার পুত্র জন্মায়, যার নাম হয় কালকেতু। কালকেতু ছিল শিবভক্ত নীলাম্বর। দেবী চণ্ডীর অনুরোধে শিব তাকে অভিশাপ দিয়ে মর্ত্যে পাঠান। পশুশিকারে কালকেতু খুব শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ব্যাধ কালকেতুর সঙ্গে ফুল্লরার বিয়ে হয়। প্রবল দারিদ্রের মধ্যেও কালকেতু ফুল্লরার দাম্পত্যজীবন সুখের হয়। কালকেতু পশুশিকার করত, ফুল্লরা সেই মৃত পশুর মাংস, চামড়া, শিং ইত্যাদি হাটে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করত এবং ঘরের কাজ করত। কালকেতু শিকারে দক্ষ এবং অপরাজেয় হয়ে উঠলে পশুরা বিপদে পড়ে দেবী চণ্ডীর আশ্রয় নেয়। দেবী চন্ডী নিজের পুজোপ্রচারের উদ্দেশ্যে একদিন বনের সমস্ত পশুকে লুকিয়ে রেখে অমঙ্গলসূচক স্বর্ণগোধিকার রূপ ধারণ করে কালকেতুর শিকারে যাবার পথে তাকে দেখা দেন। শিকারে কিছু না পেয়ে ব্যাধ কালকেতু দুঃখিত মনে বাড়ী ফেরার পথে রেগে গিয়ে ওই স্বর্ণগোধিকাকে বাড়ি নিয়ে আসে। বাড়িতে গোধিকার রূপের আড়ালে লুকিয়ে থাকা দেবী চন্ডী ষোলো বছরের মেয়ের মূর্তি ধারণ করেন। ফুল্লরা তাকে দেখে ভয় পেয়ে যায়। তখন মেয়েটি তাকে আশ্বস্ত করেন যে তিনি কালকেতুর দারিদ্র দূর করবেন। তবুও ফুল্লরা ভাবে, ওই মেয়েটি তার ঘরে সতীন রুপে আশ্রয় নিতে চাইছে। সে কালকেতুর কাছে এবিষয়ে অভিযোগ জানায়। কালকেতু তির দিয়ে মেয়েটিকে মারতে গেলে দেবী নিজের প্রকৃত পরিচয় দেন। কালকেতু ও ফুল্লরার সংশয় দূর করতে দেবী চণ্ডী নিজের নানান রুপে তাদের সামনে আবির্ভূতা হন এবং কালকেতুকে সাত ঘড়া ধন দান করেন। দেবী চণ্ডীর বরেই কালকেতু বন কেটে গুজরাট নগর তৈরি করেন। কালকেতু রাজা হলেও তার রাজ্যে প্রজার অভাব ছিল। দেবী চণ্ডীকে আহ্বান করে কালকেতু প্রজা বসতি প্রতিষ্ঠার প্রার্থনা জানায়। কালকেতুর প্রার্থনা পূরণ করতে দেবী কলিঙ্গনগরে ঝড়বৃষ্টি সৃষ্টি করে দুর্দশাগ্রস্ত প্রজাদের গুজরাটে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁর সতীন গঙ্গার সাহায্য চান। গঙ্গা রাজি না হওয়ায় দেবী চন্ডী তখন সমুদ্র ও ইন্দ্রের সাহায্যে মেঘ ও বজ্রের দ্বারা কলিঙ্গদেশে প্রবল ঝড়বৃষ্টি আর বন্যার সৃষ্টি করেন। ফলে বন্যাবিধ্বস্ত দুর্গত প্রজারা কলিঙ্গদেশ ছেড়ে পাশের গুজরাট রাজ্যে আশ্রয় নেয়।
equiz4u
0 Comments