উত্তর ঃ কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি কবিতাটির উৎস হল কবিকঙ্কণ মুকুন্দ চক্রবর্তীর চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের আখেটিক খন্ড। এই খন্ডের কালকেতুর উপাখ্যানের অন্তর্গত 'কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি আরম্ভ' অংশ থেকে কবিতাটি নেওয়া হয়েছে। নীচে কবিতাটির বিষয়বস্তু / সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হল -
সারসংক্ষেপ ঃ
কলিঙ্গের আকাশ ঘন মেঘে আচ্ছন্ন। অন্ধকার এতটাই গাঢ় যে কলিঙ্গবাসীরা নিজেদের চেহারা পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছে না। ঈশান অর্থাৎ উত্তর-পূর্ব কোণে ঘনঘন বিদ্যুতের ঝলকানি দেখা যাচ্ছে। উত্তরের প্রবল বাতাসে দূরদিগন্ত থেকে মেঘের গুরুগম্ভীর গর্জন শোনা যাচ্ছে। মুহূর্তের মধ্যেই কালো মেঘে আকাশ ছেয়ে যায়। শুরু হল মুশলধারায় বৃষ্টি। সমগ্র কলিঙ্গদেশ মেঘের গম্ভীর শব্দে কেঁপে ওঠে। ধ্বংস ও বিপদের আশঙ্কা করতে থাকে প্রজারা। প্রবল বৃষ্টিপাত ও ঘনঘন মেঘের গর্জনের সাথে সাথে ঝড়ের তাণ্ডবও চলতে থাকে। প্রজারা বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পালাতে শুরু করে। সবুজ প্রকৃতি ঢেকে যায় ধুলোয়। ঝড়ের তান্ডবে ফসল নষ্ট হতে দেখে প্রজারা ভীত হয়। মনে হয় যেন আটটি বিশাল হাতি বৃষ্টিধারায় ভাসিয়ে দিতে চায় সমগ্র কলিঙ্গদেশকে। ঘনঘন বিদ্যুতের চমকানির সাথে তীব্রভাবে বাজ পড়তে থাকে। বৃষ্টির বেগ দেখলে মনে হয় কোন বিশাল হাতি ক্রমাগত তার শুঁড় দিয়ে জলবর্ষণ করে চলেছে। সমগ্র পৃথিবী জলমগ্ন হয়ে পড়ায় জল ও স্থলের সীমান মিশে গিয়েছে। মেঘের তীব্র গর্জনে কেউ কারো কথা শুনতে পাচ্ছে না। দিন ও রাত্রির পার্থক্য দূর হয়ে গেছে। সবসময়ই অন্ধকারে ছেয়ে আছে কলিঙ্গদেশ। সমস্ত প্রজারা বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ঋষি জৈমিনিকে স্মরণ করতে থাকে। প্রবল ঝড় বৃষ্টিতে সূর্যের আলো কলিঙ্গদেশে প্রবেশ করতে পারে না। আশ্রয় হারিয়ে গর্ত থেকে বেড়িয়ে এসে সাপ জলে ভেসে বেড়ায়। জল-স্থলের পার্থক্য মুছে দিয়ে সমগ্র কলিঙ্গদেশকে প্লাবন ভাসিয়ে নিয়ে যায়। সাতদিনের টানা বৃষ্টিতে ঘড়-বাড়ি ধ্বংস হয়, শস্যের প্রবল ক্ষয়ক্ষতি হয়। ভাদ্র মাসের পাকা তালের মত শিল ঘরের চাল ভেদ করে মেঝেতে পড়তে থাকে। দেবী চন্ডীর আদেশে বীর হনুমান সবকিছু ভেঙে তছনছ করে দেন। পর্বতের মত বিশাল উচু ঢেউয়ের আঘাতে ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ে। প্রচণ্ড বেগে নদনদী নগরে প্রবেশ করে সব ভাসিয়ে নিয়ে যায়। শ্রীকবিকঙ্কণ তাঁর 'অম্বিকামঙ্গল'-এ এই ধ্নগসের কাহিনি গানের আকারে শুনিয়েছেন।
equiz4u
0 Comments